আল্লাহ চ্যালেঞ্জ করে হেরেছিলেন শয়তানের কাছে? কুরআনের ‘স্যাটানিক ভার্স’ কি বলে

কুরআনের সুরার মত অনুরূপ একটা সুরা পৃথিবীর সমস্ত কবিদের সাহায্য নিয়েও মানবজাতির পক্ষে লেখা সম্ভব হবে না। আল্লাহ কুরআনে (সুরা বনি ইসরাইলঃ ৮৮আয়াত) এরকম চ্যালেঞ্জই করেছেন মানুষকে যে, মানুষ যদি জিন-ফেরেস্তাদের সাহায্য নিয়েও চেষ্টা করে তবু তারা কুরআনের মত একটা সুরা লিখে দেখাতে পারবে না। কিন্তু আল্লার এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে শয়তান কিন্তু ঠিকই সুরা লিখে কুরআনে ঢুকিয়ে দিয়েছিল! অন্তত ইসলামের ইতিহাস সেরকম ঘটনাই আমাদের জানাচ্ছে। শুধু তাই নয়, মুহাম্মদ ঐ সুরা পাঠ করে দেবীদের সামনে মাথানত (সিজদা) করেছিলেন। সহি বুখারীর দ্বিতীয় খন্ডের ১৯ অধ্যায়ের ১৭৭ নম্বর হাদিস থেকে জানা যায় মুহাম্মদ কুরাইশদের তিন প্রধান দেবী সম্পর্কে আবৃত্তি করেন এই তিন দেবীর কাছে মানুষ সাহায্য চাইতে পারে। কুরআনের সুরা ওয়ান-নাজমে এই আয়াতটুকু পাঠ করে কাবার সামনে সিজদা করেছিল মুহাম্মদ। পৌত্তলিকরা তাদের দেবীদের স্বীকার করায় খুশি হয়ে তারাও মুহাম্মদের সঙ্গে সিজদায় শরিক হয়। কি ভয়ানক কথা!

 যাই হোক, সুরা ওয়ান-নাজমের সেই আয়াতটা পরে মুহাম্মদ বাতিল করে দেন। তিনি দাবী করেন এটা শয়তান জিব্রাইলের ছুল ধরে তার কাছে এসে তাকে বিভ্রান্ত করেছিল। বাতিল করা সেই আয়াতগুলো ছিল “তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও উযযা সম্পর্কে? এবং তৃতীয় আরেক (দেবী) মানাত সম্পর্কে? তাঁরা হলেন উচ্চপর্যায়ের গারানিক (এক প্রজাতির পাখি); তাঁদের কাছে সাহায্য চাওয়া যায়” কথিত এই শয়তানের আয়াত বা ‘স্যাটানিক ভার্স্’ কুরআনে টিকে ছিল আল্লাহ বাণী হয়ে নির্দ্বিধায় আল্লাহ’র চ্যালেঞ্জকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে! আল্লাহ বলেছিলেন কেউ কুরআনের মত সুরা লিখে আনতে পারবে না। কার্যত এই ঘটনা কুরআনে আল্লাহর চ্যালেঞ্জ অত্যন্ত শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। কুরাইশদের তিন দেবী লাত, উযযা আর মানাতকে স্বীকার করে নিয়ে পরে তাদের বাতিল করতে হলে শয়তানের অজুহাত দেয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প মুহাম্মদের হাতে ছিল না। এতে আল্লাহর চ্যালেঞ্জ হাস্যকর হয়ে গেলেও কিছু করার ছিল না। মুহাম্মদ আসলে উভয় সংকটে পড়েছিলেন। নিজ গোত্রকে খুশি করতে গিয়ে বা দলে টানতে গিয়ে তার ইসলামের অস্তিত্বই ধ্বংস হবার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। তার অনুসারীরা বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিল। প্রকাশ্যেই তারা মুহাম্মদের সমালোচনা শুরু করেছিল। দেব-দেবীদের অস্তিত্বকে মেনে নিলে কুরাইশদের ধর্মের সঙ্গে ইসলামের কি পার্থক্য রইল আর যদি কোন তফাতই না থাকে তাহলে কেন মুহাম্মদের অনুসরণ করে তারা এতদিন কুরাইশদের হাতে নাজেহাল হয়েছিল? এইসব সমালোচনায় মুহাম্মদ দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। বাধ্য হন ওয়ান-নাজমের সেই আয়াতগুলো বাদ দিতে। তার বদলে নতুন করে লেখা হয়, “তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও ওজ্জা সম্পর্কে? পূত্র সন্তান কি তোমাদের জন্য আর কন্যা সন্তান আল্লাহর জন্য? এমতাবস্থায় এটা তো হবে খুবই অসংগত বন্টন । এগুলো কতকগুলো নাম বৈ তো নয় যা তোমরা ও তোমাদের পূর্ব পুরুষরা রেখেছ (৫৩:১৯-২১)। এই পরিবর্তনের  কারণ হিসেবে এখানে শয়তানকে টেনে আনা ছাড়া কোন উপায় ছিল না। এতে আল্লাহ চ্যালেঞ্জ ধূলিস্যাত হয়ে গেলেও কিছু করার ছিল না।

 বাদ দেয়া আয়াতগুলোই ইতিহাসের আলোচিত স্যটানিক ভার্স্’। লেখক সালমান রুশদীর কথা মনে আছে তো? ইসলামের স্যটানিক ভার্স্’ নিয়ে লেখার জন্য ইরানের খোমনির ধার্য করা রুশদীর মাথার দাম এ বছরও আরো দ্বিগুণ করে বাড়ানো হয়েছে। অথচ এই কাহিনী ইসলামের প্রথম দিকের প্রখ্যাত আলেম তাবারি ও ইবনে হিশাম লিখে গেছেন (এখানে দেখুন: http://www.islam-watch.org/books/Life-of-Muhammad-Ibn-Ishaq/)। ঘটনা যে সত্যিই ঘটেছিল তা কুরআনের এই আয়াত থেকে সরাসরি প্রমাণিত হয়। যেমন-“তারা তো আপনাকে হটিয়ে দিতে চাচ্ছিল যে বিষয় আমি আপনার প্রতি ওহির মাধ্যমে প্রেরন করেছি তা থেকে আপনাকে পদস্খলন ঘটানোর জন্যে তারা চুড়ান্ত চেষ্টা করেছে যাতে আপনি আমার সাথে কিছুটা মিথ্যা সম্বন্ধযুক্ত করেন” (কোরান, ১৭: ৭৩-৭৪)

… অর্থ্যাৎ, তাবারির ও ইবনে হিশাম যে সত্য লিখেছিলেন তাতে কোন সন্দেহই নেই…।



One response to “আল্লাহ চ্যালেঞ্জ করে হেরেছিলেন শয়তানের কাছে? কুরআনের ‘স্যাটানিক ভার্স’ কি বলে”

  1. ব্রাদার আপডেট হও।এটা আগের প্রশ্ন।

    আসলে এই দুনিয়ায় কুরআন বর্তমানে আল্লাহর কিতাব আর সিরাত তো আল্লাহ লিখেননাই বরং মানুষ লিখেছে তাই এটা কি সম্ভব নয় যে তাদের ভুল হতে পারে।আমি বলছি না তাদের সবকিছুই ভুল।কিন্তু তাদের নেয়া তথ্যে ভুল থাকতেও পারে এটা হজম না হলে লেবুর রস পান করেন।
    আর আপনার এই ঘটনা সত্যি হলে নবী (স) যে একদিনে তার পুরো মতবাদ কে পালটে ফেলবে নাকি?একবার বলছে আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নাই।আবার কি ঠিক বিপরীত কথা বলবে।আর তা যদি বলত, তবে কাফির রা তাকে মিথ্যা বলার অভিযোগ দেয় নি কেন?

    আর আপনি সূরা ইসরার আয়াত প্রদর্শন করে মনে করছেন ভালোই করেছেন।তবে বলে রাখি, এই আয়াত এর ব্যখ্যা আপনার ইচ্ছামত করলে তো আর হবে না বরং দেখেন এভাবে চিন্তা করতে কি অসুবিধা হয় যে এটা আপনার মত মানুষ দের জন্য সতর্ক যে যদি তিনি মিথ্যা বলতেন তবে তার চরম ক্ষতি হত
    আরেকটি আয়াতের অর্থ বলি
    Al-Haqqah 69:44-52

    English – Sahih International

    (44) And if he [i.e., Muḥammad] had made up about Us some [false] sayings,
    (45) We would have seized him by the right hand;[1]
    (46) Then We would have cut from him the aorta.[1]
    (47) And there is no one of you who could prevent [Us] from him.

    এই আয়াতে আল্লাহ বলছেন যে যদি তিনি মিথ্যা বলতেন তার কি হাল হত!এখন এমন কিছু তো আল্লাহ করলেন না।তাহলে এথেকে বোঝা যায় যে সূরা ইসরার আয়াত নিয়ে আপনি ইচ্ছামত ব্যখ্যা করছেন।

    Like

Leave a comment

About Me

সুষুপ্ত পাঠক aka Susupto Pathok is a blogger. He wrote anti-fundamentalist, anti-nationalist, anti-religious writings. Writes in favor of humanism, gender equality, non-communal society.

Newsletter

https://www.facebook.com/profile.php?id=100089104248214