রোহিঙ্গা যাবে কোথায়?

রোহিঙ্গারা কোথাও যাবে না। বার্মা তাদের খেদিয়েছে নেবার জন্য নয়। এরা বাংলাদেশেই থাকবে। আমি ব্যাপক খুশি নানা কারণে। আস্তে আস্তে সেসব বলছি। শুরুতে সবাইকে স্মরণ করতে বলছি রোহিঙ্গারা যখন প্রথম আসতে শুরু করল তখনকার কথা। কেবল মাত্র মুসলমান বলেই তাদের প্রতি মানবতা দেখানোর ডাক উঠেছিলো এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ একাকার হয়ে গিয়েছিলো রোহিঙ্গা প্রশ্নে। তারা আমাদের ভাই। সারাদেশে চাঁদা উঠেছিলো। একবেলা খেয়ে তাদের খাওয়ানোর কথা উঠেছিলো…। যাক সবাই যখন জানেন আর বেশি না বাড়াই। এখন আসল কথা হচ্ছে বার্মা না নিলে বা রোহিঙ্গারাই আর না যেতে চাইলে কি করবেন? টেকনাফে রোহিঙ্গা শিবিরে এ্যাটার্ক করবেন? এগুলো যে করা যাবে না সেটা সবাই বুঝে। এখনো যাদের মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে তারা দুদিন পর ঠিকই মেনে নিবে। রোহিঙ্গারা আর কোনদিন বাংলাদেশ ছাড়বে না। তাদের এই দেশের নাগরিত্ব দিতে হবে নতুবা ক্যাম্পে শরণার্থী হয়ে থেকে আরো বড় ধরণের সমস্যা সৃষ্টি করবে। প্রায় ১৫ লাখ জনসংখ্যাকে ক্যাম্পে ফ্রি খাওয়ানো কতদিন সম্ভব যারা বছরে এক লাখ শিশুর জন্ম দেয়? রোহিঙ্গা জনসংখ্যা চোখের পলকে বাড়তে থাকবে। কারণ তাদের মধ্যে চরম আকারে অশিক্ষা কাজ করে। ধর্মে মুসলিম হওয়ায় অশিক্ষার সুযোগে ইসলাম জেঁকে বসে আছে তাদের মধ্যে। তাদেরকে তাই স্বাভাবিক নাগরিক জীবন দিয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক যে সংকট তার কি হবে ভাবছেন? এবার তাহলে ইতিহাসে একটু পেছনে চলে যাই…।

 

১৯৪৭ সালে পূর্ববঙ্গ থেকে দেশমাটি ছেড়ে হিন্দু জনগোষ্ঠি পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে ঠাই নিয়েছিলো। মুহূর্তে লক্ষ লক্ষ মানুষের চাপে পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক জীবন ভেঙ্গে গিয়েছিলো। স্টেশনে ভাসমান মানুষের ভীড়ে টেকা দায় ছিলো। গৃহহীন এই মানুষের ঢল ছিলো পূর্ববঙ্গ থেকে। যাদের আত্মীয় স্বজন ছিলো তাদের হয়ত বারান্দায়, চিলেকোঠায়, উঠোনে আশ্রয় দিতে পেরেছিলো। কিন্তু তাদের খাবার চাকরি বাকরির কি হবে? হঠাৎই কোলাতার চাকরির বাজারে আগুন লেগে গিয়েছিলো। ঋতৃক ঘটকের সিনেমা না দেখলে সেই করুণ চিত্র বুঝা যাবে না। কত মেয়ে পেটের দায়ে সোনাগাছি চলে গেলো। ভিক্ষুকে ভরে গেলো কোলকাতার রাস্তাঘাট। ক্ষুধাত্ব আর ক্ষুব্ধ পূর্ববঙ্গের বাঙালরা এক সময় না পেরে কোলকাতার জমিদার ধনীদের বাড়িগুলো সংঘবদ্ধ হয়ে আক্রমন করে দখল করতে লাগল। সুনীলের পূর্ব-পশ্চিমে তার খানিকটা চিত্র পাওয়া যায়। কোলকাতার ছিমছাম তিলত্তমা চেহারাটা এই বিপুল জনসংখ্যার চাপে পড়ে গরীব কেরানী বউয়ের মত রুগ্ন অসুস্থ চেহারায় রূপ নিলো। বাঙালদের নিয়ে ছিলো কোলকাতার খাস ঘটিদের টিটকারি। তারা শ্রমবাজারকে প্রায় শেষ করে দিয়েছিলো। ন্যুনতম মুজরি দিলেই একটা পূর্ববঙ্গের বাঙাল চাকরি করতে রাজি ছিলো। অভাব আর টিকে থাকার চেষ্টায় তারা হয়ে উঠেছিলো স্বার্থপর। কোলকাতাও সম্পূর্ণ পাল্টে গিয়েছিলো সংস্কৃতিগতভাবে। চরম অথনৈতিক সংকট ও প্রতিযোগীতায় পড়ে ‘দাদা খেয়ে এসেছেন নাকি গিয়ে খাবেন’ হতে তাদের বাধ্য করেছিলো। তখন তো কেউ পূর্ববঙ্গের বাঙাল খেদাও আন্দোলন করতে পারেনি। কারণ নেতারা ঠিক করে দিয়েছেন কারা দেশ ছাড়বে কারা থেকে যাবে। কিছু বলার নেই। করাও নেই। বাংলাদেশের তো সেই বাস্তবতা ছিলো না। শুরুতে সীমান্ত উদোম করে দিয়েছিলেন কেন? এখন ১৫ লাখকে বার্মা নিবে না ধরে নিন। ধরে কেন নিবে না এটাই চুড়ান্ত। আপনাদের কপাল ভালো রোহিঙ্গারা বড় রিসোর্ট বাগানবাড়ি দখল করে নিয়ে তাদের জন্য কলোনি বানায়নি। কোলকাতায় তেমনটাই হয়েছিলো। শ্রমবাজার কিংবা চাকরির বাজার সে অর্থে এখনো সংকটে রোহিঙ্গারা ফেলায়নি। কারণ এখনো তারা বিদেশী ও বাংলাদেশী সরকারের টাকায় খাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার এ পর্যন্ত ৭২ হাজার কোটি টাকা রোহিঙ্গাদের পিছনে খরচ করেছে। এই খরচ সত্যিকারের সামাজিক প্রতিযোগীতা সত্যিকারের জনজীবনের অর্থনৈতিক সংকটে বাংলাদেশকে ফেলেনি। কিন্তু বিদেশী অর্থ আসা অচীরেই বন্ধ হবে। বাংলাদেশ সরকারও আর তাদের জন্য বাজেটের বরাদ্দ দিতে পারবে না। যেহেতু রোহিঙ্গাদের দায় কেউ নিবে তাই বাংলাদেশকে আজ হোক কাল হোক রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি দিতেই হবে (তখন বোধহয় নোবেলটা না দিয়ে পারবেই না!)। সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। আমি খুশি কারণ রোহিঙ্গারা যখন লুঙ্গি কাছা দিয়ে লাঠি হাতে ‘আই রোহিঙ্গা’ বলে স্থানীয়দের কাছে নিজের হিস্যা বুঝে নিতে আসবে তখন আমার মনে পড়বে এদেশে একজন চাকমা মারমা হিন্দু বৌদ্ধ কখনো এভাবে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি ভয়ে। রোহিঙ্গারা সেই চ্যালেঞ্জটা জানাবে। রোহিঙ্গারা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে ‘মুসলিম জাতীয়তাবাদে’ ভাটা আনতে পারে কিনা সেটাও দেখার আগ্রহ আছে। রোহিঙ্গারা টেকনাফকে রোহিঙ্গাল্যান্ড বানাতে পারবে কিনা সেই চিন্তায় ঘুম না আসার কোন কারণ দেখিনা। কারণ গোটা দেশটাকে দারুল ইসলাম বানাতে চাওয়াদের দান ছদকা করে আমরা তাদের ঘাড়গর্দানে খারাপ রাখিনি। চরমোনাই পীরের মুরিদদের সংখ্যা আর কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের সংখ্যা যখন আমাদের নির্ঘুম রাখেনি তখন রোহিঙ্গারা নিজেদের জন্য আলাদা ইসলামিক ল্যান্ড বানালে আপনাদের অসুবিধা কি? রোহিঙ্গারা জঙ্গি চোর বদমাইশ ঠিক আছে- তবে সেটা বাংলাদেশের জঙ্গি চোর বদমাইশদের চেয়ে বেশি খারাপ তা তো নয়। মানে এগুলোর যে মানদ্বন্ড রোহিঙ্গাদের সেই মানদ্বন্ডই। তাহলে আরো কিছু চোর বদমাইশ জঙ্গিকে নাগরিত্ব দিলে সমস্যা কি? চেষ্টা করুন রোহিঙ্গাদের মানুষ করতে। গিলতে যখন হবেই তখন প্রস্তুতি নেয়াই মঙ্গল। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদ্রাসা মসজিদে ছবক থেকে তাদের বাঁচাতে হবে। ইসলামপন্থিদের রাজনীতির ঘুটি হওয়া থেকে তাদের বাঁচাতে হবে। আর কান মলে প্রতিজ্ঞা করতে হবে ‘মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই যে শালায় কয় তার দাড়িটুপি ছিড়ে দিতে হবে…’

 



Leave a comment

About Me

সুষুপ্ত পাঠক aka Susupto Pathok is a blogger. He wrote anti-fundamentalist, anti-nationalist, anti-religious writings. Writes in favor of humanism, gender equality, non-communal society.

Newsletter

https://www.facebook.com/profile.php?id=100089104248214