পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির বিজয় ও বাংলাদেশের লুঙ্গি ডান্স

ভন্ডদের ফালাফালি দেখে গা গুলিয়ে আসতে চায়! যে দেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, বিসমিল্লাহ ছাড়া যে সংবিধান শুরুই করা যায় না, যে রাষ্ট্র নিজেকে ‘মুসলিম’ বলে সরকারীভাবে স্বীকৃত, যে দেশের নেতারা মুসলিমবাদ ছাড়া রাজনীতি করতে পারেন না- সেই দেশের পাবলিক পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ফেল করায় লুঙ্গি তুলে নাচছে! না আমি হুজুর মৌলবাদী হেফাজতী জামাতীদের কথা বলছি না। এদের নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নাই। বলছি নিজেদের যারা সেই মাপের লিবারাল মনে করা “বাঙালী মুসলমান” আইমিন যাদের বাপ চাচারা মুসলিম লীগ করত, ‘লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’ করেছিলো, জিন্নাকে যারা বাপ মনে করে জাতীয় সংগীত গাইত, তাদের আওলাদরা ‘বাঙালী মুসলমানের নিজস্বতা’ নামের হিন্দুত্ববাদের মত সেইম জিনিস দিনরাত জপ করেও পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি জিতে নাই দেখে খুশিতে লুঙ্গি খুলে ফেলছে!

৫৭টা “মুসলিম দেশ” নিয়ে এদের কোন অবজেকশন নেই। বিশ্বব্যাপী প্যান ইসলামিজম, রাজনৈতিক ইসলাম, জিহাদ, মুসলিম জাতীয়তাবাদ নিয়ে এরা জীবনে দুইটা লাইন লিখে নাই কিন্তু ভারতে ‘হনুমানরা’ ক্ষমতায় আসতে না পারায় এরা খুশি! এই খুশি কি অসাম্প্রদায়িক সেক্যুলার অবস্থান থেকে? মোটেই নয়! যদি সেরকমই হত তাহলে এরা পাকিস্তান তুরস্ক বাংলাদেশের মুসলিমবাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান জানাত। মমতাকে ভোট দিয়ে তৃতীয়বারের মত মুখ্যমন্ত্রী বানিয়েছে কারা? “মমতা বেগম” বলে যার বিরুদ্ধে তীর্যক সমালোচনা পশ্চিমবঙ্গে ছিলো, ‘মুসলিম তোষণ’ অভিযোগ ছিলো যার বিরুদ্ধে- এসব থাকার পরও হিন্দুরাই তাকে ভোট দিয়েছে। বাংলাদেশের মত ভোটের আগে নামাজ কুরআন পড়া ছবি বাজারে ছাড়তে হয়নি। কাজেই বাংলাদেশের “পোগতিশীল বাঙালী মুসলমানদের” পশ্চিমবঙ্গের “হনুমানদের” (হিন্দুত্ববাদী বুঝাতে হিন্দু পৌরাণিক হনুমান বিশ্বাসকে কটাক্ষ) ধন্যবাদ জানানো উচিত। তারা আর যাই হোক আপনাদের মুসলিম লীগ সাপোর্টের মত বিজেপিকে সাপোর্ট করেনি। এটা হিন্দুদের প্রগতিশীলতার জয়। তাদের ধন্যবাদ জানান। আপনার লুঙ্গি খুলে নাচার মধ্যে প্রতিপক্ষের (মুসলিমবাদীর প্রতিপক্ষ হিন্দুত্ববাদী) পরাজয়ের আনন্দই প্রতিফলিত হচ্ছে!

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি জিতলে কি হত? কিছুই হত না! আমেরিকায় যখন ট্রাম্প জিতল তখন লিবারালরা হায় হায় করে উঠল! কেন? ট্রাম্প বর্ণবাদী সাম্প্রদায়িক ইত্যাদি। আমি বলেছিলাম ট্রাম্পকে পছন্দ না হলে হোয়াইট হাউস থেকে পাঁচ বছর পর আমেরিকানরা বের করে দিবে। ট্রাম্পের সাধ্য নাই আমেরিকাকে বদলে ফেলবে। ইরান পাকিস্তানের রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিয়ে কিন্তু লিবারালদের রাতে ভালো ঘুম হয়! তুরস্কে এরদোয়ানের মত আগামাথা সাম্প্রদায়িক মুসলিমবাদী নেতার তুরস্কের ক্ষমতায় যখন আসে তখন কাউকে হাহাকার করতে দেখিনি। সবার ট্রাম্প মোদির ক্ষমতায় আসার খবরে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছিল। শ্রীলংকায় মোদি নেই কিন্তু সেখানে বোরখা মাদ্রাসা নিষিদ্ধ করে আইন পাশ হয়েছে। ফ্রান্সে মোদি নেই তবু ফরাসি প্রেসিডেন্ট প্রতীকী আক্রান্ত হলেন মুসলিম বিশ্বে। বেলজিয়াম অস্ট্রিয়া কঠর হলো অভিবাসী মুসলিমদের উপর। এখানেও মোদি ট্রাম্প ছিলো না। ভারতের আগামী নির্বাচনে মোদি অমিত শাহকে বিদায় করে দেয়ার চাবিকাঠি ভারতীয় জনগণের হাতে। ট্রাম্প বিদায় নিয়েছে। কিন্তু ৫৭টা পলিটিক্যাল ইসলামিক দেশের লিবারাল কট্টর যে পন্থী ক্ষমতায় আসুক তাদের ‘মোদি অমিত শাহের’ মতোই হতে হয়! পাকিস্তান বাংলাদেশের মোদি অমিত শাহদের পাঁচ বছর পর ভোটের মাধ্যমে বদল হয় না। ইমরান খান কিংবা শেখ হাদিসাকে মদিনা সনদ, হযরত ওমরের শাসন, ইসলামী অনুশাসন এইসব বলে কয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে হবে। তাদের পরিবর্তে যারা আসবে তাদেরও এইসব বলে কয়ে যেতে হবে। এরকম কথা ভারতে মোদি অমিত শাহও বলে না! এসব বললে ভারতে চরম সাম্প্রদায়িকতা হিসেবে দেখা হবে। কিন্তু বাংলাদেশ পাকিস্তান তথা মুসলিম বিশ্বে এগুলো সাধারণ মুসলমানিত্ব! এটাকে সেই বিশেষ প্রজাতি (যে ‘পোগতিশীলরা’ এখন লুঙ্গি খুলে নাচছে) সাম্প্রদায়িকতাই মনে করে না!


পশ্চিমবঙ্গের মানুষ হিন্দুত্ববাদীদের যেমন প্রত্যাখ্যান করেছে তেমনি বামেদের ইসলামিক সহবাসকেও প্রত্যাখ্যান করেছে। বামরা চিরকাল তাদের আক্কেলহীনতা দেখিয়ে এসেছে, আসবে। ফুরফুরা শরীফের আব্বাস ভাইজান যে নতুন মুসলিম লীগের দোকান খুলেছে সেটা পশ্চিমবঙ্গ মানুষ ধরে ফেলেছে। তাদেরকে এ জন্য অভিনন্দন। মমতা ব্যানার্জির ইসলাম তোষণ যে ৩০ পার্সেন্ট ভোট বাগানো সমাধান নয় আশা করি সেটা আব্বাস ভাইজান আর আসাদউদ্দিন ওয়াসিস এবার ভোটের হিসাবে যে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল সেটা থেকে তিনি শিক্ষা নিবেন। মুসলমান ও ইসলামকে আলাদা করতে শিখুন। মাদ্রাসায় অনুদান দিলে, ইমাম ভাতা দিলে, তিন তালাকের পক্ষে থাকলে মুসলমানরা খুশি হয় ঠিকই কিন্তু তাতে তাদের সর্বনাশ ঘটে। তারা ধর্মান্ধ থাকলে সেই ভোট আব্বাস আসাদউদ্দিনরাই ভাগ করে নিবে। এটি ভারতীয় সেক্যুলার লিবারালদের বুঝতে হবে।

বি: দ্র: বাংলাদেশের মানুষের কাছে তিস্তার জল পাওয়ার চেয়ে মোদি ফেল করেছে সেই খুশিতে তাদের আনন্দের আর সীমা নাই !



Leave a comment

About Me

সুষুপ্ত পাঠক aka Susupto Pathok is a blogger. He wrote anti-fundamentalist, anti-nationalist, anti-religious writings. Writes in favor of humanism, gender equality, non-communal society.

Newsletter

https://www.facebook.com/profile.php?id=100089104248214