চব্বিশ ঘন্টার বেশি হয়ে গেছে। বিখ্যাত লালন গীতি শিল্পী ফরিদা পারভীন কি লালনের গান ফেইসবুকে শেয়ার দিয়ে জেলে যাওয়ার ঘটনায় কোন প্রতিবাদ করেছেন? করেননি। বাউলদের উপর আক্রমন, অগ্নিসংযোগ কোন ঘটনায় লালনের গান বেচে খাওয়া গাইয়েরা প্রতিবাদ করেন না। লালন বেচে খাওয়া ফরহাদ মজহারের ফেইসবুক আইডি খা খা করছে। এতবড় একটি ঘটনা ঘটল, লালনের বাণীকে ধর্মানুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগ করা হলো ফরহাদ মজহার চুপ কেন?
কারণ ফরহাদ মজহার লালনকে ইসলামের সুফিজমের একজন সাধক, একজন মুসলমান সাধক ফকির হিসেবে খাড়া করতে চান। এদেশের প্রগতিশীল সেক্যুলারিজমের বিরুদ্ধে একজন ভাববাদী মরমি বাউল ফকিরকে খাঁড়া করাই উদ্দেশ্য। লালনকে আহমদ শফি হাটহাজারীর বিরুদ্ধে খাড়া করা নয়। আলাউদ্দিন খাঁ সংগীতালয় আগুনে পোড়ানোর পর মাদ্রাসার ছাত্রদের নিয়ে তারা কেউ ক্ষোভ দাগেনি। কারণ লালন বা বাউল দর্শন তাদের উদ্দেশ্য নয়। লালনের গানে একদিকে মাদ্রাসামনারা হামলা করবে অন্যদিকে লালনকে মুসলমান ফকির বানানো হবে। এতে একদিকে ইসলামী খিলাফতের দিকে যাবে দেশ অন্য দিকে বাংলার উদার ভাববাদী মরমি দর্শনকে মেরে ফেলে তাকে ইসলামী দর্শন বানিয়ে সংস্কৃকিগতভাবে ইসলামের উর্ধে যে লোকজ ধর্ম ছিল তাকে হত্যা করা হবে।
লালনের গান পোস্ট করে ইসলাম অবমাননা ঘটনায় সলিমুল্লাহ খান, ঝাকির তালুকদার, ব্রাত্য রাইসু কেউ একটি লাইন লিখেনি। এটাই প্রত্যাশিত। এরা সকলেই মুসলিম লীগের বিভিন্ন শাখার মানুষ। আহমদ ছফা বেঁচে থাকলে এই ঘটনার পিছনে বিজেপির হাত আবিস্কার করত। ছফা তার শিষ্যদের রেখে গেছে। চরম মাত্রার সাম্প্রদায়িক শিষ্যরা কেউ এই ঘটনায় টু শব্দ করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না জামাতে ইসলামী কন্টেন ক্রিয়েটররা ঘটনার পিছনে ভারতের নির্বাচনে প্রভাবিত করতে এরকম ঘটনা ঘটানো হয়েছে জাতীয় তত্ত্ব খাড়া না করবে।
নজরুল ইসলামকে দিয়ে কোন কাজ হয়নি। গোলাম মুস্তফা ফরুক আহমদের সময় নজরুলকে দিয়ে মুসলিম জাতি চেতনা প্রভাবিত করার চেষ্টা হয়েছিল। সেটি ব্যর্থ হয়েছে নজরুলের নিজের স্ববিরোধী সাহিত্যিক অবস্থানের কারণেই। রবীন্দ্রনাথকে দমন করতে না পারলে মুসলিম জাতি চেতনার কোন ভবিষ্যত নেই। বাঙালি জাতি নয়, বাঙালি মুসলমান এক স্বাতন্ত্র্য জাতিসত্ত্বা এইসব উদ্ভূট থিউরী প্রতিষ্ঠা করতে রবীন্দ্রনাথকে অস্বীকার করতে হবে। এর জন্য লালনের ভাববাদী চিন্তাকে ইসলাম ধর্মের তত্ত্বে রূপ দিয়ে একটা শেষ চেষ্টা করবে। লালনের ভাস্কর্য দড়ি দিয়ে টেনে নামানো মাদ্রাসার পক্ষে থেকে লালনের খাদেম সাজা, তাকে রবীন্দ্রনাথের চেয়ে বড় কবি দার্শনিক বানানো, তাকে ইসলাম তত্ত্বের দার্শনিক সাজানো সবই রবীন্দ্রনাথকে কেন্দ্র করে অভিন্ন জাতি চেতনা, রবীন্দ্রনাথের ভারততীর্থ দর্শন থেকে আলাদা মুসলমান থেকে যাওয়ার এক ব্যর্থ চেষ্টা।
ওরা কিছুই পাবে না আফগানিস্থান হওয়া ছাড়া…।
Leave a comment