ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও হিটলারের দুর্ভাগ্য তারা একই যাত্রায় পৃথক ফল ভোগ করেছে যেখানে ইসলামী সাম্রাজ্যবাদকে সভ্যতার নব দুয়ার হিসেবে দেখানো হয়েছে।
কমরেড যতীন সরকার কিছুদিন আগেও দাবী করেছিলেন ইসলাম না আসলে পৃথিবী এক হাজার বছর পিছিয়ে থাকত। মার্কসবাদীদের ইসলামী সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে এরকম গৌরব করতে কেন দেখা যায়? ইসলামী সাম্রাজ্যবাদ বা উপনিবেশ ভারত স্পেনের উদাহরণ দিলে পরিস্কার হবে। এরকম উপনিবেশকালে শাসকদের স্থাপত্য, খাদ্য, পোশাকসহ শিল্পের অন্যান্য শাখা বিজিতদের প্রভাবিত করে তাদেরকে সমৃদ্ধ করে। শাসকরাও বিজিতদের সংস্কৃতি শিল্প খাদ্য পোশাক থেকে গ্রহণ করে। সেকখা তো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বেলায় আরো বেশি করে সত্য! যতীন সরকার তো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে একই কথা এই এঙ্গেল থেকে বলতে পারতেন, ব্রিটিশরা না আসলে পৃথিবী এক হাজার বছর পিছিয়ে থাকত!
কথা তো মিথ্যে নয়। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ যেখানে গেছে সেখানে ব্রিটিশদের শোষক চরিত্রটি যেমন গেছে তেমনি তাদের দর্শন, সাহিত্য, শিক্ষা, জ্ঞান, তাদের প্রযুক্তি পৌঁছে গেছে। মহান মহত হৃদয়ের কিছু ব্রিটিশ ভারতবর্ষের শিক্ষা প্রগতিশীলতার দুয়ার খুলে দিয়েছিলেন সে তো ব্রিটিশরা এদেশে এসেছিল বলেই। এগুলো বললে ব্রিটিশদের দালালী কিন্তু ইসলামী সাম্রাজ্যবাদের প্রশংসা করলে উদার মুক্তমনা!
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের নিন্দা করে গেছে ব্রিটিশরাই। তাদের এই উপনিবেশ চরিত্র নিয়ে তাদের চিন্তানায়করা লিখে গেছেন। অন্যদিকে ইসলামী সাম্রাজ্যবাদ বা মুসলিম সাম্রাজ্যবাদের উত্তরাধিকার হচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়। তারা তাদের সাম্রাজ্যবাদী শাসনের জন্য গর্বিত। ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের আগে তিনশো বছরের মুসলিম সাম্রাজ্যবাদ চলেছিল। সাম্রাজ্যবাদ খারাপ জিনিস হলে মুসলিম সাম্রাজ্যবাদ নয় কেন? কারণ ব্রিটিশ কলোনিয়াল যুগের সমালোচক ব্রিটিশ চিন্তানায়করা করলেও ইরফান হাবিব মুঘল শাসনামলের স্বর্ণযুগ তুলে ধরতেই আগ্রহী। রমিলা থাপাররা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে আর মুসলিম সাম্রাজ্যবাদকে একচোখে দেখেন না। আদৌ মুসলিম সাম্রাজ্যবাদ বলতে কিছু ছিল বলে স্বীকার করেন না।
‘ইসলামের ইতিহাস’ বা ‘মুসলিম শাসন’ বলে পাঠ্যবইতে আমরা যা পড়ি তা আসলে সাম্রাজ্যবাদের গুণকীর্তন। ব্রিটিশরা যদি এদেশে তাদের জেনারেশন রেখে যেতো, তাদের স্পাম দিয়ে একটি ভারতীয় জনগোষ্ঠি রেখে যেতো তাহলে আজকে তাদের হয়ে কথা বলত তাদের ঐতিহাসিকরা। মুসলিম সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্রে এটাই ঘটেছে।
হিটলারের কথা ধরুন, সে যদি কোন ধর্ম প্রচার করত তাহলে আজকে তার সম্প্রদায়কে কেউ ইহুদী নিধনের জন্য দায়ী করলে সেটা ফোবিয়া হিসেবে বিদ্বেষী হিসেবে দেখা হতো। তাদের জঘন্ন ন্যাতসি দর্শনকে নিয়ে কেউ সমালোচনা করলে সেটা হতো তাদের ধর্ম নিয়ে কটুক্তি। ইসলামের চিন্তাধারার সঙ্গে হিটলারের অনেক মিল। মুসলমানদের কাছে হিটলারের জনপ্রিয়তাও তাই বেশি। হিটলারের মত একই রকম ইহুদী বিদ্বেষী, নারী বিদ্বেষী, কট্টর জাতীয়তাবাদী, সাম্প্রদায়িক, সাম্রাজ্যবাদী চরিত্রটি দেড়শো কোটি মানুষের নবী হয়ে বসে আছে! ন্যাতসিবাদ নিষিদ্ধ হলেও সেই ধর্মিটি আজো টিকে আছে। শুধু তাই নয় সেই ধর্মের মধ্যযুগীয় বর্বর আইনের বিরোধীতা করলে সেটিকে চরমমাত্রায় বিদ্বেষ হিসেবে দেখে লিবারালরা!
পৃথিবীর ট্রেজেডি এখানেই। আমার সাম্রাজ্যবাদকে একই যাত্রায় পৃথক ফল দিয়েছি। স্তালিন হিটলারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে পোল্যান্ড দখল করে নিলেও স্তালিনকে সাম্রজ্যবাদী বলতে পারবো না। কারণ পৃথিবীতে কমিউনিস্ট সম্প্রদায় তৈরি হয়ে আছে। তাদের আছে বুদ্ধিভিত্তি উইঙ্গ। তারা কথা বলে উঠবে। হিটলারের সেটি ছিল না। ব্রিটিশরা লড ক্লাইভের দুর্নীতি লু্টপাটের কাহিনী নিজেরাই লিখে গেছে। কিন্তু নবাব সিরাজদৌল্লা মুসলিম শাসনের আইকন বিধায় তার নামে কুর্কীতির ইতিহাস লিখলে সেটিকে বানোয়াট, মিথ্যা, বিদ্বেষ বলে ডিফেন্স করার সম্প্রদায় খাড়া হয়ে আছে। বিদ্যাসাগরের সিরাজকে নিয়ে লেখা ইতিহাসকে বামপন্থীরা বিদ্বেষী ইতিহাস বলেছে। মুসলিমরা বিদ্যাসাগরকে ব্রিটিশ পোষ্য বলেছে। ব্রিটিশ আমলে দুর্ভিক্ষের ইতিহাস পাওয়া গেলেও আপনি মুঘল আমলের দুর্ভিক্ষের ইতিহাস পাবেন না। কারণ তাদের সাম্রাজ্যবাদের উত্তরাধিকাররা সরব। তাদের উত্তরাধিকাররা তাদের সাম্রাজ্যবাদের গৌরব ইতিহাস তাদের স্কুলে পড়ায়। নইলে একটা দস্যু হানাদার বখতিয়ার খিলজি কেমন করে নায়ক হিসেবে আমাদের পাঠ্যে উঠে আসে?
‘ইসলামের ইতিহাস’ ‘মুসলিম শাসন’ নামের সাম্রাজ্যবাদের গৌরব কীর্তন বন্ধ না হলে একথা আমি বারবার বলবো! সাম্রজ্যবাদের উত্তরাধিকার থাকতে পারে না। মন্দের উত্তরাধিকার হিসেবে দাঁড়ানো পৃথিবীর বুকে একটা দুষ্ট ঘা!
Leave a comment